কুরআনে অন্যায়ভাবে হত্যার শাস্তির বিধান
জাহেলিয়াতের যুগে কোনো আইন-কানুন ছিল না; তাই সবল গোত্রগুলো দুর্বল গোত্রগুলোর ওপর যেভাবে ইচ্ছা অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন করতো। তা অনেক সময় হত্যা পর্যন্ত গড়াতো। সবল সম্প্রদায়ের কাউকে দুর্বল সম্প্রদায়ের লোকেরা হত্যা করলে একজনের জন্য পুরো গোত্রকে বিনাশ করাই ছিল সে সমাজের কানুন। আবার দুর্বল সম্প্রদায়ের কাউকে হত্যা করলে সবলদের বিচার হতো না বললেই চলে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পর সমাজ থেকে অত্যাচার-নির্যাতনসহ হত্যার সুষ্ঠু বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ তায়ালা বিধান প্রণয়ন করেন। হত্যার বিধান কেমন হবে- তা উল্লেখ করে আল্লাহ তায়লা বলেন-
আয়াতের অনুবাদ-
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ১৭৮ নং আয়াতটি উল্লেখ করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হত্যার বিধান প্রণয়ন করেন। আর কেউ যদি কাউকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ক্ষমা লাভ করতে চায় এবং তাতে উভয় পক্ষ সম্মত থাকে, তবে তারও বিধান রয়েছে।
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদের লক্ষ্য করে বলছেন, ‘মানুষ হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আল্লাহ তায়ালা বিধান নাজিল করেছেন। আর তা হলো- স্বাধীন ব্যক্তির বদলে হত্যা করা হবে স্বাধীন ব্যক্তিকে; দাসের পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না। আবার দাসের বদলে দাস এবং নারী বদলে নারীকে হত্যা করা হবে।’
জাহেলি যুগে কোনো আইনের শাসন ছিল না বললেই চলে। তাই ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিই বিরাজমান ছিল। শক্তিমান গোত্র দুর্বল গোত্রকে যেভাবে ইচ্ছা জুলুম করত।
জুলুমের একটি পন্থা ছিল এ রকম, ‘শাক্তিশালী গোত্রের কেউ নিহত হলে শুধু হত্যাকারীর বদলে গোত্রের একাধিক লোককে হত্যা করা হতো। কখনো পুরো গোত্রকেই ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। আবার পুরুষের পরিবর্তে নারীকে এবং গোলামের পরিবর্তে স্বাধীন লোককে হত্যা করা হতো।’
তাফসিরে ইবনে কাছিরে এসেছে- ইসলাম আবির্ভাবের কিছুকাল আগে দুটি গোত্রের মাঝে যুদ্ধ বাঁধে। উভয় পক্ষ বহু নারী-পুরুষ ও স্বাধীন-পরাধীন লোক নিহত হয়। তাদের এ সমস্যার সমাধান না হতেই ইসলামের আবির্ভাব ঘটে।
বিবদমান উভয় গোত্রই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুসলমান হওয়ার পর উভয় গোত্রই তাদের নিহতদের রক্তপণ গ্রহণের আলোচনা শুরু করে। তন্মধ্যে যে গোত্রটি শক্তিশালী তারা বলল, ‘আমরা যতক্ষণ আমাদের গোলামদের পরিবর্তে তাদের স্বাধীন ব্যক্তিকে এবং নারীদের পরিবর্তে পুরুষদের হত্যা না করবো ততক্ষণ থামবো না।’
তাদের এ রকম অজ্ঞ দাবির মুখে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাজিল করে বলেন, ‘স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, গোলামের পরিবর্তে গোলাম এবং নারীর পরিবর্তে নারীই হবে ফয়সালা।’
জাহেলিয়াতের নিপীড়নমূলক প্রথাগুলোর প্রচলনের সমাধি রচনা করে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা প্রণয়নে ইনসাফপূর্ণ আইন বা বিধান বাস্তবায়ন করতেই আল্লাহ তায়ালা এ বিধান জারি করেন। যে যাকে হত্যা করেছে; তার পরিবর্তে শুধু তাকেই হত্যা করা যাবে। এর বেশি কাউকে নয়।
পড়ুন- সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৭
পরিশেষে...
কুরআনুল কারিমের উল্লিখিত এ আয়াতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের অন্যায়-অবিচার ও জুলুম-অত্যাচারের লাগাম টেনে ধরতে এবং সুষ্ঠু-সুন্দর পন্থায় হত্যার বিচার করতেই আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাজিল করেন। কুরআনের এ বিধানের বাস্তবায়ন যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজো বিদ্যমান।
সমাজে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে এ বিধান বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বিচার-ব্যবস্থায় হত্যার বিধান চালু হলে অবৈধ হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাস থেমে যাবে। সমাজে সুখ-শান্তি ফিরে আসবে।
মহান দয়ালু আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে তাদের জীবনে উল্লিখিত আয়াতের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কুরআনের বিধান বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস