বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও যুদ্ধ শেষ হয়নি রাজিয়ার
কোমর থেকে পা পর্যন্ত অচল, হুইল চেয়ারই একমাত্র ভরসা। কখনও মা, কখনও বন্ধুদের সহযোগিতায় নিচতলা থেকে তিনতলা উঠতে হয় তাকে। ক্লাস শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা রুমকিকে। আত্মপ্রচেষ্টা আর পরিবারের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও সেই স্বপ্ন যেন মলিন হতে শুরু করেছে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে পা রাখার ১০ দিনের মধ্যেই।
রাজিয়া জানান, তার বিভাগের ক্লাস হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবনের ৩য় তলায়। প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে ক্লাস করা দুষ্কর। নিজের সমস্যার কথা প্রশাসনকেও কয়েকবার জানিয়েছেন। তবে আশানুরূপ ফল পাননি তিনি। এমন দুর্ভোগে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা থেমে যেতে বসেছে।
সকল শারীরিক প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজিয়া ২০১৫ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৩৯ এবং ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগ থেকে ৪.০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
রাজিয়া হতাশা প্রকাশ করে বলেন, স্বপ্ন ছিলো শিক্ষক হওয়ার। পড়াশোনা শেষ করে আমার মতো দুর্ভাগাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু ৩য় তলায় উঠে ক্লাস করা আমার জন্য সম্ভব হবে না। আমার স্বপ্নটা বোধ হয় আর পূরণ হবে না।
পিকআপ ভ্যানের চালক বাবা আর গৃহিণী মায়ের অকুণ্ঠ সমর্থন আর সংগ্রাম শেষে ২০১৮-১৯ সেশনে রাবির আরবি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন রাজিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার আবেদন, তাকে যেন নিচ তলায় ক্লাস হয় এমন বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।
রাজিয়ার মা নাজনীন বেগম বলেন, ছোট থেকেই অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি মেয়েটাকে। এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এত বড় জায়গায় পড়ার সুযোগ পেয়েও সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার জন্য তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে।
রাজিয়ার এই দুর্ভোগের কথা শুনে এগিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক জামসেদ আলম সবুজ এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সাম্য’।
আরবি বিভাগের সভাপতি ড. নিজাম উদ্দিন বলেন, বিভাগে নিয়মিত ক্লাস না করলে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। তাছাড়া ৩য় তলায় এসে ক্লাস করাটা অবশ্যই তার জন্য কষ্টকর। এখন যদি উপাচার্য তাকে নিচতলায় যেসব বিভাগের ক্লাস হয়, সেগুলোতে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করেন তাহলে হয়তো সমস্যাটা সমাধান হতে পারে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, রাজিয়ার জন্য ক্লাসগুলো নিচে করার ব্যবস্থা করাটা হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগগুলো দীর্ঘদিন থেকে এভাবেই আছে। এছাড়া তার অনুষদের বাইরে অন্য অনুষদের বিভাগে ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। তারপরও আমরা দেখছি তার জন্য কী করা যায়।
সালমান শাকিল/এফএ/এমএস